Header Ads

Header ADS

বেড়াতে আসুন সন্দ্বীপে - সাজিব পাটোয়ারী

ও'ভাই চলেন  না, আংগো (আমাদের) সন্দ্বীপ
কেন যাবেন না?
কি নেই এখানে?
আমি বলি  সব প্রাচুর্যে ভরপুর আমাদের সন্দ্বীপ।
জীবনে একবার হলেও ঘুরে আসুন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি সন্দ্বীপ।



সন্দ্বীপ বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে চট্টগ্রাম জেলার মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত দ্বীপ উপজেলা।  অবারিত সবুজ মাঠ, নদীর বুকে জেগে উঠা চর কিংবা সহজ সরল মানুষ এক কথায় এই দ্বীপের সবকিছুই ভালো লাগার মত। এছাড়াও দ্বীপে দেখার মত ঐতিহ্যবাহী বিভিন্ন স্থান রয়েছে। সাগর নদী পরিবেষ্টিত এই দ্বীপে ভ্রমণ সারা জীবন মনে রাখার মত।

কখন যাবেন ? কিভাবে যাবেন সন্দ্বীপ? 

সন্দ্বীপ যাওয়ার সবথেকে উৎকৃষ্ট সময় হচ্ছে শীতকাল। যাতায়াত ব্যবস্থা থেকে শুরু করে সবধরনের সুবিধা সবথেকে বেশি উত্তম শীতকালে।

চট্টগ্রাম এর অলংকার থেকে সেইফ-লাইন সার্ভিসে ২৫  টাকা ভাড়ায় কুমিরা ঘাটঘর রোড যাওয়া যায়। আবার নিউ মার্কেট থেকে ৭ নাম্বার মেট্রো সার্ভিসে করে ২৭টাকা ভাড়াতে কুমিরা ঘাটঘর রোড যাওয়া যায়। যদি আরও বিলাসিতা নিয়ে যেতে চান, তাহলে কর্নেল হাট থেকে ছোট ছোট কার আছে জনপ্রতি ১০০ টাকা দিয়ে যেতে পারেন। ঢাকা থেকে আসার পথে কুমিরা ঘাটে নেমে যাবেন। কুমিরা ঘাটঘর রোড থেকে ১০-২০ (জনপ্রতি ১০টাকা) টাকা ভাড়ায় টমটম কিংবা রিক্সায় করে কুমিরা-সন্দ্বীপ ফেরিঘাট ব্রিজ পৌঁছানো যায়।

কুমিরা ঘাট থেকে সন্দ্বীপ: কুমিরা সন্দ্বীপ ঘাট থেকে সন্দ্বীপ যাওয়ার জন্যে স্পিড বোট ও ছোট লঞ্চ আছে। স্পিড বোট ভাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকা,লঞ্চের ভাড়া ১০০ টাকা। যদি ভ্যানে ছড়ার অভিজ্ঞতা না থাকে তাহলে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন।এক কিলোমিটারের ব্রিজ পায়ে হেঁটে না গিয়ে ২০ টাকা দিয়ে ভ্যানে ছড়তে পারেন। কুমিরা থেকে গুপ্তছড়া ঘাট (সন্দ্বীপ) যেতে সময় লাগবে ৩০(স্পীড বোটে) মিনিটের মত। আর যদি লঞ্চে যান তাহলে ১ থেকে দেড় ঘণ্টা লাগবে। বিশাল জলরাশি পাড়ি দিতে দিতে মনে পড়ে যাবে কুমার বিশ্বজিতের গাওয়া  সেই গানটি,

আমি সাম্পানে বান্ধিবো ঘর
তুমি সাথি হলে
জোয়ার ভাটায় ভাসবো দুজন
ঢেউয়ে রি তালে তালে ।

কল্পনার জগতে ভাসতে ভাসতে  পৌছে যাবেন সেই স্বপ্নের দ্বীপ সন্দ্বীপে ।

নিশ্চয় ভাবছেন, কোথায় থাকবেন? কিভাবে যাবেন..!

যদি হোটেলে থাকতে চান তবে সন্দ্বীপ ঘাট (গুপ্তছড়া ঘাট) থেকে সিএনজি নিয়ে(ভাড়া ২৫০-৩০০) চলে যাবেন টাউন কমপ্লেক্সে। আরও আছে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে থাকা মোটর সাইকেল, প্রকৃতির বিশুদ্ধ হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে নিতে যেতে পারেন মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে।  এখানে ভালো মানসম্মত হোটেলের ব্যবস্থা আছে। কয়েকটা হোটেলের নাম বলছি

মোল্লা গেস্ট হাউস
ফয়সাল গেস্ট হাউস
গ্রীন বাংলা গেস্ট হাউস
সন্দ্বীপ টাওয়ার গেস্ট হাউস

এসি নন এসির ব্যবস্থা আছে। হোটেল গুলোতে আছে মজাদার সব খাবার । (তাজা সামুদ্রিক মাছ , তাজা সবজী , দেশী হাঁস আর মুরগীর মাংস । সাথে নদীর তরতাজা  ইলিশ মাছ খেতে ভুলবেন না কিন্তু!

আর ক্যাম্পিং করার জন্যে যেতে পারেন কমপ্লেক্স থেকে সোজা সন্দ্বীপের পশ্চিম পাড়ে (রহমতপুর) নদী ঘেঁষে।  ক্যাম্প করে থাকার জন্যে সবচেয়ে ভালো পরিবেশ।

এবার আসি কোথায় ঘুরবেন? কি খাবেন?? 

অবাক হওয়ার কিছুই নেই বাংলার প্রখ্যাত কবি আব্দুল হাকিমের জন্মভূমিতে ! দ্বীপের প্রত্যেকটি জায়গা দেখার মতন । ফসল ভরা মাঠ সবুজ প্রকৃতি, হাট ,বাজার সব কিছু । দ্বীপের উত্তর থেকে দক্ষিণের সব প্রান্ত ঘুরে দেখতে পারেন অনায়াসে ।  দ্বীপের বিখ্যাত কিছু জিনিসের নামও  প্রাপ্তিস্থান তুলে ধরছি।

শিবের হাট ও বিখ্যাত বিনয় সাহা এর মিষ্টান্ন:

সন্দ্বীপ আসছেন, অথচ বিশ্বখ্যাত সন্দ্বীপের বিখ্যাত জিনিস টা  খাবেন না! তা কিভাবে হয়! খাটি গরুর দুধের  সর দিয়ে তুলতুলে নরম, দুধের রসে চপচপ করা ধপধপে সাদা মিষ্টি খেতে কার না মনে চাইবে?
এসব শুনে  এতক্ষণে নিশ্চয়  আপনার জিহ্বাই জল চলে আসছে!

এটা খেতে আপানকে আসতে হবে দক্ষিণ সন্দ্বীপের শিবের হাটে, অবস্থিত বিনয় সাহার দোকানে।
ছোটবড় দুই সাইজের মিষ্টি পাওয়া যায়। দামও সস্তা( ১পিস) ছোট টা ১২,বড় টা-২০ টাকা দিয়ে  খেতে পারবেন। আমি নিশ্চিত আপনি একটা মুখে দিয়ে শুরু করাটা মনে থাকবে কিন্তু  শেষ  করতে মন থাকবেনা।আজীবন এই মিষ্টির স্বাদ মনে থাকবে আপনার। আপনি খাবেন আর চিন্তা করবেন কি খাচ্ছি আমি?? এই মিষ্টির খ্যাতি রয়েছে ইউরোপ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য সহ বিভিন্ন দেশে।

সন্দ্বীপের ডাব:
সন্দ্বীপের ডাব এক কথায় অনন্য অসাধারণ, সুস্বাদু সন্দ্বীপের ডাবের আছে জগত খ্যাতি । আপনি হাটে - বাজারে সবখানে ডাব পাবেন। তবে খাবেন যেহেতু একটু মজা নিয়ে খান।এই মজাটা নিতে আপনাকে যেতে হবে ইসলাম সাহেবের খামার বাড়িতে।সেনের হাট -এনাম নাহারের মাঝামাঝিতে অবস্থিত।

খামার বাড়িতে গিয়েই দেখতে পাবেন পুকুরের পাড়ে  ছোটছোট অসংখ্য গাছে  আছে ডাবের সমারোহ। গাছ থেকে ডাব পেড়ে খোলা নীল  আকাশের নিচে, পুকুরে ভাসতে থাকা ছোটছোট ডিঙি নৌকাতে বসে  ঘুরেঘুরে  ডাব খাওয়ার অনুভূতি অন্যরকম। আপনি ভাবনার জগতে হারিয়ে যাবেন, ভাবতে থাকবেন আপনার প্রিয়তমার কথা আহা ভাবতেই কেমন আনন্দে শরীর নেচে উঠছে।

সন্দ্বীপ আসছেন অথচ  পুরো সন্দ্বীপ আপনার পদচারণ হবেনা, ঘুরতে যাবেননা! এ'কেমন কথা!
সবুজের সমারোহ বেষ্টিত সৌন্দর্যের লীলাভূমি সন্দ্বীপের প্রত্যেকটা জায়গা অসাধারণ।প্রথমে চলে যেতে পারেন  সম্পূর্ণ পাকা প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে সোজা  সন্দ্বীপের অলংকার  সেই ” সবুজ চরে ”।

ধবধবে সাদা সাদা বকের সারি দেখলে মনে হবে, এটা কোন সাইবেরিয়ায় আসলাম । রয়েছে অতিথি পাখীদের কল কাকলি। সবুজ গাছগাছালির নিচে শুয়ে বিশুদ্ধ নিঃশ্বাস  নিতে নিতে জলের গানের বিখ্যাত সেই গানটি গাইতে মন চাইবে নিশ্চিত বৃক্ষতলে শুয়ে,তোমার দুঃখ ছুঁয়ে। ঘুম আসেনা, ঘুম স্বার্থপর

এবার ঘুরতে ঘুরতে চলে যেতে পারেন বিশাল সন্দ্বীপ এর সি বিচে, বিশাল জলরাশি, বিশাল ঢেউয়ের গর্জন এর সাথে টকটকে লাল সূর্য ডুবার অসাধারণ দৃশ্যপট।এসব দেখতে দেখতে  তখন আপনার প্রাণ খুলে গায়তে ইচ্ছে হবে, ওরে নীল দরিয়া আমায় দে রে দে ছাড়িয়া.....

চলে যেতে পারেন সন্দ্বীপের সর্ব দক্ষিণের সেই কালির চরে ,
যেখানে শুধু সবুজ ফসল আর রুপালী ধান এর হাতছানি এবং হাজার হাজার গরু ছাগল আর মহিষের বাতান । ঘুরে আসতে পারেন দক্ষিণ সন্দ্বীপে অবস্থিত সন্দ্বীপ দারুলউলুম মাদ্রাসা থেকে।

চলে যেতে পারেন  মুছাপুর গ্রামের সেই বিখ্যাত দীঘিতে। যেটি আবিষ্কৃত রাতারাতি অনেকটা  রূপ কথার কাহিনীর মতো। দেখে আসতেই পারেন বিশাল বিখ্যাত এই দিঘি টা।  দেখেই আসতে পারেন  ভারতবর্ষের কাকাবাবু খ্যাত কমরেড মোজাফফর আহমেদ এর স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি থেকে।

খেজুরের রস:
সারাদিনের ঘুরাফিরা শেষ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে  বিশুদ্ধতায় ভরপুর মজাদার খেজুররস  পেয়ে না  খাওয়াটা বোকামি হবে। আশেপাশেই খোঁজ করলেই পাবেন। গাছ থেকে সদ্য নামানো রসের দিয়ে  গভীর রাতে দলবল নিয়ে সাগর পাড়ে ইটের চুলায় রসের ফিন্নি  রান্না করে খাওয়ার মজাটাই অন্যরকম। প্রতিটা মুহুর্ত আপনাকে অন্যরকম এক অনুভূতি দিবে,যা কল্পনা করতে পারবেননা।খেজুরের রসের ফিন্নি/পায়েস স্বাদ ভুলবেন না কখনো নিশ্চিত। সকালে সন্দ্বীপের প্রিয় ঘন খেজুরের মিঠাই এর সাথে কোড়ানো নারিকেল আর চিতল পিঠা খেয়ে আসবেন।আমি নিশ্চিত খাবেন একবার মনে থাকবে মরণের আগপর্যন্ত।

দেরি না করে এসে পড়ুন, সৌন্দর্যের লীলাভূমি সন্দ্বীপ

1 comment:

Powered by Blogger.