Header Ads

Header ADS

চট্টগ্রামে সালাম দিয়ে রিকশা থামিয়ে ছিনতাই

নগরীতে রিকশা নিয়ে ঘুরে লক্ষ্য ঠিক করার পর পরিচিতজনের মত সালাম, এরপর রিকশা দিয়ে গতিরোধ, সবশেষে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সবকিছু ছিনিয়ে নেওয়া- এভাবেই ছিনতাই করে যাচ্ছে একটি চক্র। 

দুই দিন আগে এই চক্রের একজনকে গ্রেপ্তারের পর নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে আরও পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. ইদ্রিস (৩৮), বদি আলম (৩০), আব্দুল হামিদ (২১), জামাল হোসেন (৪০) এবং বাইতুল মামুন ওরফে মামুন (২৬)।

এদের মধ্যে বদি আলম ও আব্দুল হামিদ রিকশাচালক। এদের কাছে থাকা তিনটি রিকশাও আটক করা হয়েছে।

চক্রের দুই সদস্য ইউনুছ ও মফিজ এখনো পলাতক।

এর আগে ৩১ মার্চ রাতে লালদিয়ার চর থেকে গ্রেপ্তার হয় এই চক্রের সদস্য মো. শফিক।  

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) শাহ মো. আব্দুর রউফ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই চক্রটি গত সাত-আট বছরে নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় এক থেকে দেড় হাজার মানুষের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।

“রিকশায় চড়ে বা আগে থেকে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ছিনতাইয়ের শিকার ব্যক্তিকে বহনকারী রিকশা কাছাকাছি আসলে তারা পরিচিতজনের মত সালাম দেয়।

“কখনো বন্ধু আবার কখনো কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রনেতা পরিচয়ে সালাম দিয়ে রিকশা থামায় তারা। এরপর পূর্ব পরিচিতের মত কথা বলে। এই ফাঁকে দলের অন্য সদস্যরা ঘিরে ফেলে ওই রিকশা আরোহীকে। এসময় রিকশার গতি কমলেই তারা অস্ত্র দেখিয়ে ছিনতাই করে।”

‘দোস্ত কেমন আছিস, রিকশা থামা’

গত ২৫ মার্চ রাতে নগরীর সদরঘাট থানার আইস ফ্যাক্টরি রোডে মাহতাব উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি ছিনতাইয়ের শিকার হন। এ ঘটনায় মামলার পরই মাঠে নামে পুলিশ।

৩১ মার্চ শফিককে গ্রেপ্তারের পর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অন্যদেরও গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের দেওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, ২৫ মার্চ সন্ধ্যায় তারা নগরীর সাগরিকা এলাকায় এক ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা, মোবাইল ফোন ও স্বর্ণালংকার ছিনিয়ে নেয়।

“এরপর তারা আইস ফ্যাক্টরি রোডে যায়। সেখানে দুইবার রিকশা নিয়ে চক্কর দেয়। রাত ১০টার দিকে তৃতীয়বার চক্কর দেওয়ার সময় তারা মাহতাব উদ্দিনকে টার্গেট করে।”

তিনি বলেন, মাহতাবকে বহনকারী রিকশাটি অনুসরণের এক পর্যায়ে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলের সামনে ছিনতাইকারী চক্রের একটি রিকশা পাশাপাশি হয়। এসময় ওই রিকশা থেকে ইউনুছ সালাম দিয়ে মাহতাবকে বলে- ‘দোস্ত কেমন আছিস, রিকশা থামা’।

“এরপর সামনে এবং পেছনে রিকশা দিয়ে মাহতাবকে বহনকারী রিকশাটির ঘিরে ফেলে ছিনতাইকারীরা। একপর্যায়ে ইউনুছ নেমে মাহতাবের সাথে হ্যান্ডশেক করে। এসময় তার ইশারা পেয়ে শফিক ছুরি হাতে মাহতাবের রিকশায় তার পাশে উঠে বসে।”

পুলিশ কর্মকর্তা শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, ইউনুছ কোমরে রাখা একটি খাতা দেখিয়ে বলে- ‘কী আছে দে, নয়ত গুলি করে দেব’।

ছিনিয়ে নেওয়া ৪০ হাজার টাকার মধ্যে ৩৯ হাজার পাঁচশ টাকা উদ্ধার করেছে পুলিশ।

ইদ্রিসের দেওয়া তথ্য অনুসারে ছিনতাই করা মোবাইল ফোনটি জামাল হোসেনের কাছ থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। অন্য মোবাইলটি পাওয়া যায় শফিকের কাছ থেকে।

ছাত্র পরিচয়েও ছিনতাইয়ে তারা

গ্রেপ্তার চক্রটি গত ৪ জানুয়ারি নগরীর ডিসি হিলের সামনে থেকে রিকশা আরোহী এক ব্যক্তির কাছ থেকে সাত হাজার টাকা, সোনার আংটি ও মোবাইল ফোন সেট ছিনিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেছে।

পাশাপাশি গত ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে আন্দরকিল্লায় নগর ভবনের সামনে থেকে এক রিকশা আরোহীর কাছ থেকে পাঁচ হাজার টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়ার কথাও জানিয়েছে।

পুলিশ কর্মকর্তা শাহ মো. আব্দুর রউফ বলেন, ৪ জানুয়ারি ডিসি হিলের সামনে সিটি কলেজের শিক্ষক কিরীটি দত্ত ছিনতাইয়ের শিকার হন। ছাত্র পরিচয় দিয়ে এই চক্রটি তার মোবাইল ও টাকা ছিনিয়ে নেয়।

২০ ফেব্রুয়ারি ছিনতাইয়ের শিকার জামালখান ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি এম এ নাসের জানান, ছাত্রনেতা পরিচয় দিয়ে নগর ভবনের সামনে তার রিকশার গতিরোধ করে ছিনতাই করা হয়।

No comments

Powered by Blogger.