কর্ণফুলীর গৌরব হাজার বছরের বন্দর চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম বন্দরের আনুষ্ঠানিক যাত্রার ১২৭ বছর অতিক্রম করলেও তারও হাজার বছর আগে প্রাকৃতিকভাবে এ বন্দরের গোড়াপত্তন হয়। ইবনে বতুতা ও মার্কো পোলোসহ বিশ্বের নামকরা পরিব্রাজকের ভ্রমণ কাহিনীতেও তৎকালীন চট্টগ্রাম বন্দরের অস্তিত্ব ফুটে উঠেছে। ঐতিহাসিকদের মতে, চট্টগ্রাম একটি প্রাকৃতিক বন্দর। কর্ণফুলী নদীর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য একে বন্দর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। আনুষ্ঠানিক যাত্রার অনেক আগে থেকেই এ বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য ও যাত্রী পরিবাহিত হতো। ব্রিটিশরাই প্রথম এ বন্দরকে বিধিবদ্ধ কাঠামোর আওতায় এনেছে।
বিশিষ্ট নৃ-তাত্ত্বিক গবেষক ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর শামসুল হোসাইন-এর মতে, প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে যোগাযোগ ও পরিবহনের উপায় হিসাবে জলপথ মানব সভ্যতার বিকাশে এক বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। জলপথে যোগাযোগের অনুষঙ্গ হিসেবে গড়ে ওঠে পোতাশ্রয় এবং বন্দর। বঙ্গোপসাগরের তীরে এমন একটি প্রাচীন সমুদ্র বন্দরের নাম ‘চট্টগ্রাম বন্দর’। রূপনারায়ণ নদীর পশ্চিম তীরে বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলার বিশ্বখ্যাত প্রাচীন তাম্রলিপ্ত বা তমলুক বন্দর প্রাকৃতিক কারণে অ-নাব্যতা সমস্যার কবলে পড়লে পূর্ব ভারতের পণ্যরপ্তানির চাহিদা পূরণের সুবিধার্থে বিকল্প বন্দর হিসেবে আনুমানিক সপ্তম শতাব্দী থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের ব্যবহার শুরু হয়। বাংলা ও আসামের যে কোন জায়গায় নদী পথে এই বন্দর থেকে পণ্য আনা নেওয়া প্রাকৃতিক সুবিধা বিরাজমান ছিল।
ইতিহাসবিদদের মতে, ইংরেজ শাসনের প্রথম দিকে ইংরেজ ও দেশীয় ব্যবসায়ীরা বার্ষিক এক টাকা সেলামির বিনিময়ে নিজ ব্যয়ে কর্ণফুলী নদীতে কাঠের জেটি নির্মাণ করেন। পরে ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে প্রথম দুটি অস্থায়ী জেটি নির্মিত হয়। ১৮৭৭ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার গঠিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রাম বন্দরে দুটি মুরিং জেটি নির্মিত হয়। ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দের ২৫ এপ্রিল চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার কার্যকর হয়। ১৮৯৯-১৯১০ সালের মধ্যে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনার ও আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে যুক্তভাবে চারটি স্থায়ী জেটি নির্মাণ করে। ১৯১০ সালে চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে রেলওয়ের সংযোগ সাধিত হয়। ১৯২৬ সালে চট্টগ্রাম বন্দরকে মেজর পোর্ট ঘোষণা করা হয়। পাকিস্তান আমলে ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট কমিশনারকে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্ট-এ পরিণত করা হয়। স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চট্টগ্রাম পোর্ট ট্রাস্টকে চট্টগ্রাম পোর্ট অথরিটিতে পরিণত করা হয়। এটি একটি স্বায়িত্তশাসিত সরকারি সংস্থা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্বের নামকরা প্রায় বন্দরের সৃষ্টি প্রাকৃতিকভাবে। খ্রিস্টপূর্ব সাড়ে ৩০০ বছর আগে গ্রিস রেকর্ডে এ বন্দরের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। আর্য যুগে ইউরোপীয় বণিকরা কর্ণফুলী মোহনায় ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন। ইবনেবতুতা এ বন্দরকে শেটগাঙ (গঙ্গার অববাহিকা) হিসেবে উল্লেখ করেন। আরব ও ইয়েমেনি বণিকরা এ বন্দর দিয়ে পূর্বপ্রাচ্যে বাণিজ্য করতেন। পর্তুগিজরা বন্দরটির নাম দিয়েছিলেন পোর্ট গ্রান্ডে।
সমাজ বিজ্ঞানীদের মতে, ইবনে বতুতা এবং মার্কো পোলোর ভ্রমণ কাহিনীতে বেরিয়ে এসেছে চট্টগ্রাম নগরের কথা। তারাও বলেছেন, তখন চট্টগ্রাম শহর ছিল বর্ধিষ্ণু এলাকা। মার্কো পোলো তার চাচা নিকোলাই পোলোকে নিয়ে এসেছিলেন। মার্কোর ভ্রমণ কাহিনী প্রকাশ হওয়ার পর চট্টগ্রামের সঙ্গে ইউরোপের নৌ-বাণিজ্য বেড়ে যায়। ভাস্কো দা গামা চট্টগ্রাম এসেছিলেন পর্তুগিজদের হয়ে। তার ভ্রমণের পর চট্টগ্রাম হয়ে ওঠে ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু।
বর্তমানে দেশের আমদানি-রপ্তানির শতকরা ৮৫ ভাগই চট্টগ্রাম বন্দর তথা কর্ণফুলীর মাধ্যমে হয়ে থাকে।
বছরে প্রায় আড়াই হাজার জাহাজ এ বন্দরে ভিড়ে থাকে। ফলে কর্ণফুলীর সাথে বঙ্গোপসাগরের সংযোগটি দেশের প্রাণপ্রবাহ হিসাবে স্বীকৃত।
বর্তমানে দেশের আমদানি-রপ্তানির শতকরা ৮৫ ভাগই চট্টগ্রাম বন্দর তথা কর্ণফুলীর মাধ্যমে হয়ে থাকে।
বছরে প্রায় আড়াই হাজার জাহাজ এ বন্দরে ভিড়ে থাকে। ফলে কর্ণফুলীর সাথে বঙ্গোপসাগরের সংযোগটি দেশের প্রাণপ্রবাহ হিসাবে স্বীকৃত।
কর্ণফুলীকে ঘিরে চট্টগ্রামে জাহাজ নির্মাণ শিল্পের গোড়াপত্তন হয় সুপ্রাচীন কালে। চট্টগ্রামে নির্মিত জাহাজ যেত ইউরোপের বাজারে। চাঁদ সওদাগর ছিলেন ওই সময় চট্টগ্রাম থেকে অন্যতম জাহাজ রপ্তানিকারক। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় চট্টগ্রাম থেকে জাহাজ রপ্তানির সেই ঐতিহ্য আবার ফিরে এসেছে। ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপিং এরই মধ্যে বিশ্বে জাহাজ রপ্তানির ক্ষেত্রে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। থেমে নেই কর্ণফুলী শিপইয়ার্ড এবং এফএমসিও। তারাও জাহাজ নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে।
জাহাজ নির্মাণ শিল্পে নদী কর্ণফুলীর অবদান প্রসঙ্গে এক প্রকৌশলী বলেন কর্ণফুলী শুধু চট্টগ্রামের প্রাণ নয়, দেশের হৃদপি । কর্ণফুলীর অবদানে চট্টগ্রামে বন্দর হয়েছে, শিল্পায়ন হয়েছে। জাহাজ নির্মাণ শিল্পেও প্রধান ভূমিকা রাখছে কর্ণফুলী। এ নদীর গতিপ্রবাহ বিঘ্নিত হলে দেশের অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে যাবে।
দেশের মোট জাতীয় প্রবৃদ্ধির হার (জিডিপি) যেখানে ৬ থেকে ৭ শতাংশ, সেখানে চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের প্রবৃদ্ধির হার ২১ শতাংশ। দেশের আমদানি-রপ্তানির ৯২ শতাংশ পরিবাহিত হয় এ বন্দরের মাধ্যমে। প্রতিবছরেই বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং বাড়ছে। ২০০৯-১০ অর্থ বছরে চট্টগ্রাম বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয় তিন কোটি ৭০ লাখ ১ হাজার ১৭৬ মেট্রিক টন। এরমধ্যে আমদানি হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ১৩ হাজার ২০৮ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি হয়েছে ৪১ লাখ ৮৭ হাজার ৯৬৮ মেট্রিক টন। বিগত ২০১০-১১ অর্থ বছরে কার্গো হ্যান্ডলিং আগের চেয়ে আরো বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৪ কোটি ৪৮ কোটি ৯৪ হাজার ৫২০ মেট্রিক টন। এরমধ্যে আমদানি হয়েছে ৩ কোটি ৯৯ লাখ ১৪ হাজার ১৪৫ মেট্রিক টন এবং রপ্তানি হয়েছে ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ৩৭৫ মেট্রিক টন। অপরদিকে, বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং বৃদ্ধির পাশাপাশি রাজস্ব আদায়ও বেড়ে গেছে।
বন্দরের জেটিসমূহ:
জেনারেল কার্গো বার্থ-১২টি
কন্টেইনার বার্থ-৮টি
স্বয়ংক্রিয় কার্গো হ্যান্ডলিং বার্থ:
ডলফিন অয়েল জেটি -১টি
গ্রেইন সাইলো জেটি-১টি
সিমেন্ট ক্লিংকার জেটি-১টি
টিএসটি জেটি-১টি
সিইউএফএল জেটি-১টি
কাফকো ইউরিয়া জেটি-১টি
এমোনিয়া জেটি-১টি
ড্রাইডক জেটি-১টি
মুরিং বার্থ-১০টি
কোস্টার ও জাহাজ জেটি-১৬টি
জেনারেল কার্গো বার্থ-১২টি
কন্টেইনার বার্থ-৮টি
স্বয়ংক্রিয় কার্গো হ্যান্ডলিং বার্থ:
ডলফিন অয়েল জেটি -১টি
গ্রেইন সাইলো জেটি-১টি
সিমেন্ট ক্লিংকার জেটি-১টি
টিএসটি জেটি-১টি
সিইউএফএল জেটি-১টি
কাফকো ইউরিয়া জেটি-১টি
এমোনিয়া জেটি-১টি
ড্রাইডক জেটি-১টি
মুরিং বার্থ-১০টি
কোস্টার ও জাহাজ জেটি-১৬টি
চট্টগ্রাম বন্দরের আয়-ব্যয়
চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি পণ্য থেকে কাস্টম হাউস গত অর্থ বছরে (২০১৩-১৪) রাজস্ব সংগ্রহ করেছে ২৪ হাজার কোটি টাকার বেশি। চলতি অর্থ বছরে ২৫ হাজার কোটি টাকার বেশি আদায় হবে বলে আশা করছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। এ ভাবে বছরে বছরে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পাচ্ছে কাস্টম হাউসের। অপরদিকে, বছরে বছরে প্রকৃত আয় কমছে চট্টগ্রাম বন্দরের। অথচ, বন্দরে পণ্য উঠানো-নামানো, জাহাজের আনা-গোনা বেড়েছে। এসব খাত থেকে আয়ও বেড়েছে। কিন্তু প্রকৃত আয় বাড়েনি বন্দরের। তাদের আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি। ফলে প্রকৃত আয় হ্রাস পাচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দর অর্থ উপার্জনকারি কোনো খাত নয়, জাতীয় সেবা খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। সেই হিসেবে জাতীয় উন্ন্য়নে এই বন্দরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কস্ট বেইজড ট্যারিফ নির্ধারণের কথা বলা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের ট্যারিফ বৃদ্ধি করেছে। এতে রাজস্ব আয়ও বছরে বছরে বেড়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে রাজস্ব ব্যয়ে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বেড়েছে প্রচুর। এসব কারণে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত আয় কমে গেছে।
চট্টগ্রাম বন্দর অর্থ উপার্জনকারি কোনো খাত নয়, জাতীয় সেবা খাতের অন্যতম প্রতিষ্ঠান। সেই হিসেবে জাতীয় উন্ন্য়নে এই বন্দরের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ৯০ শতাংশের বেশি পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কস্ট বেইজড ট্যারিফ নির্ধারণের কথা বলা হলেও বন্দর কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রকমের ট্যারিফ বৃদ্ধি করেছে। এতে রাজস্ব আয়ও বছরে বছরে বেড়েছে। কিন্তু তার চেয়ে বেশি প্রবৃদ্ধি হয়েছে রাজস্ব ব্যয়ে। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় বেড়েছে প্রচুর। এসব কারণে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের মধ্যে ব্যবধান হ্রাস পেয়েছে। অর্থাৎ প্রকৃত আয় কমে গেছে।
বন্দরের পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় বেশ বোঝা যায় যে তাদের আয়ের চেয়ে খরচ বেশি। প্রতিষ্ঠানটির প্রকৃত আয় পরপর দু’ অর্থ বছরে পাঁচ শ’ কোটি টাকা ছুঁয়েছিল। সেখান থেকে গত অর্থ বছরে নেমে এসেছে ২৪৫ কোটি টাকায়।
গত অর্থ বছরে বন্দরের মোট রাজস্ব আয়ের পরিমান ছিল ১৫৯৫ কোটি টাকা। রাজস্ব ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৮১৮ কোটি টাকা। এই অর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা, জাহাজ ক্রয়, যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধে খরচ হয়েছে । আর আয়কর পরিশোধ করা হয়েছে ৫৩২ কোটি টাকা। এ সময়ে বন্দরের মোট উদ্বৃত্ত আয় হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। ৬ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে কম প্রকৃত আয় বন্দরের। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে মোট রাজস্ব আয় ছিল ১১৩৩ কোটি টাকা। আর ব্যয় ছিল ৪৫৭ কোটি টাকা। প্রকৃত আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৩৬ কোটি টাকা। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে মোট রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫৫ কোটি টাকা। বৃদ্ধি পায় ব্যয়ও । মোট রাজস্ব ব্যয় হয়েছিল ৬২৪ কোটি টাকা। এ সময়ে উদ্বৃত্ত আয়ের পরিমান ছিল ৩০৫ কোটি টাকা। ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় বেড়ে যায় প্রচুর। ১৪৫৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। রাজস্ব ব্যয় হয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। প্রকৃত আয় হয়েছে ৪৯২ কোটি টাকা।২০১১-২০১২ অর্থ বছরেও প্রকৃত আয়ের পরিমান ছিল ৪৯৭ কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৫২৯ কোটি টাকা ও ৬৫২ কোটি টাকা।
গত অর্থ বছরে বন্দরের মোট রাজস্ব আয়ের পরিমান ছিল ১৫৯৫ কোটি টাকা। রাজস্ব ব্যয়ের পরিমাণ ছিল ৮১৮ কোটি টাকা। এই অর্থ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ভাতা, জাহাজ ক্রয়, যন্ত্রাংশ ক্রয় এবং সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যাক্স পরিশোধে খরচ হয়েছে । আর আয়কর পরিশোধ করা হয়েছে ৫৩২ কোটি টাকা। এ সময়ে বন্দরের মোট উদ্বৃত্ত আয় হয়েছে ২৪৫ কোটি টাকা। ৬ বছরের মধ্যে এটাই সবচেয়ে কম প্রকৃত আয় বন্দরের। ২০০৮-২০০৯ অর্থ বছরে মোট রাজস্ব আয় ছিল ১১৩৩ কোটি টাকা। আর ব্যয় ছিল ৪৫৭ কোটি টাকা। প্রকৃত আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৩৬ কোটি টাকা। ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে মোট রাজস্ব আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১১৫৫ কোটি টাকা। বৃদ্ধি পায় ব্যয়ও । মোট রাজস্ব ব্যয় হয়েছিল ৬২৪ কোটি টাকা। এ সময়ে উদ্বৃত্ত আয়ের পরিমান ছিল ৩০৫ কোটি টাকা। ২০১০-২০১১ অর্থ বছরে রাজস্ব আয় বেড়ে যায় প্রচুর। ১৪৫৩ কোটি টাকা আয় হয়েছে। রাজস্ব ব্যয় হয়েছে ৬৩৪ কোটি টাকা। প্রকৃত আয় হয়েছে ৪৯২ কোটি টাকা।২০১১-২০১২ অর্থ বছরেও প্রকৃত আয়ের পরিমান ছিল ৪৯৭ কোটি টাকা। এ সময়ে রাজস্ব আয় ও ব্যয়ের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ১৫২৯ কোটি টাকা ও ৬৫২ কোটি টাকা।
২০১২-২০১৩ অর্থ বছরে এক লাফে প্রকৃত আয় হ্রাস পেয়েছে পূর্ববর্তী অর্থ বছরের তুলনায় ১৩০ কোটি টাকা। এ সময়ে ব্যয় হয়েছে ৮০৩ কোটি টাকা। মোট রাজস্ব আয় হয়েছিল ১৫৭০ কোটি টাকা।
বন্দরের সবচেয়ে বেশি আয় হয় অপারেশনাল খাত থেকে। ৮০ ভাগ আয় হয় এই খাত থেকে। কার্গো হ্যান্ডলিং, স্টোর রেন্ট, পোর্ট এন্ড পাইলটেজ চার্জ, জেটি চার্জ, লোডিং ডিসচার্জিং চার্জ, রিভার ডিউস ইত্যাদি থেকে প্রচুর আয় বন্দরের। মুরিংভাড়া ও পানি বিক্রিসহ আরো কিছু খাত থেকে বন্দরের রাজস্ব আসে। এ ছাড়া, ভূমি ইজারা থেকে আসে বন্দরের মোট আয়ের প্রায় ২০ ভাগ। ব্যয়ের প্রধান খাতগুলো হলো উন্নয়ন প্রকল্প, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, নদী ও নৌযান সংস্কার, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতনÑভাতা, সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যা´, আয়কর প্রদান, জ্বালানি খরচ ও যন্ত্রপাতির অবচয়।
মোট রাজস্ব আয় থেকে মোট ব্যয় ও আয়কর বাদ দিয়ে প্রকৃত আয় হিসাব করা হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, বন্দরে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় বেড়েছে। অপরদিকে, নতুন বিনিয়োগের সুফলও পাওয়া যাচ্ছে না। নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এটা পুরো ক্ষমতায় চালু না হওয়ায় কাক্সিক্ষত আয় আসছে না। এটা পুরোপুরি চালু হলে বন্দরের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পেতো। তথ্যাভিজ্ঞমহলের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে অপ্রয়োজনীয় কেনা-কাটা ও ব্যয় প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে আয় কমে গেছে বছরে বছরে।
বন্দরের সবচেয়ে বেশি আয় হয় অপারেশনাল খাত থেকে। ৮০ ভাগ আয় হয় এই খাত থেকে। কার্গো হ্যান্ডলিং, স্টোর রেন্ট, পোর্ট এন্ড পাইলটেজ চার্জ, জেটি চার্জ, লোডিং ডিসচার্জিং চার্জ, রিভার ডিউস ইত্যাদি থেকে প্রচুর আয় বন্দরের। মুরিংভাড়া ও পানি বিক্রিসহ আরো কিছু খাত থেকে বন্দরের রাজস্ব আসে। এ ছাড়া, ভূমি ইজারা থেকে আসে বন্দরের মোট আয়ের প্রায় ২০ ভাগ। ব্যয়ের প্রধান খাতগুলো হলো উন্নয়ন প্রকল্প, যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ, নদী ও নৌযান সংস্কার, কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতনÑভাতা, সিটি কর্পোরেশনের হোল্ডিং ট্যা´, আয়কর প্রদান, জ্বালানি খরচ ও যন্ত্রপাতির অবচয়।
মোট রাজস্ব আয় থেকে মোট ব্যয় ও আয়কর বাদ দিয়ে প্রকৃত আয় হিসাব করা হয়। পর্যালোচনায় দেখা যায়, বন্দরে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ খাতে ব্যয় বেড়েছে। অপরদিকে, নতুন বিনিয়োগের সুফলও পাওয়া যাচ্ছে না। নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনালে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। এটা পুরো ক্ষমতায় চালু না হওয়ায় কাক্সিক্ষত আয় আসছে না। এটা পুরোপুরি চালু হলে বন্দরের প্রকৃত আয় বৃদ্ধি পেতো। তথ্যাভিজ্ঞমহলের মতে, চট্টগ্রাম বন্দরে অপ্রয়োজনীয় কেনা-কাটা ও ব্যয় প্রচুর বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে আয় কমে গেছে বছরে বছরে।
লেখক : রিপোর্টার, দৈনিক পূর্বকোণ, ফেব্রুয়ারী ১৩, ২০১৫

Comments
Post a Comment