সন্দ্বীপের গৌরবের কিছু তথ্য উপাত্ত
১। খ্রীষ্ট্রীয় সপ্তম শতাব্দির বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে প্রথম লেখক বাঙ্গালীর আদি কবি মিননাথ সন্দ্বীপের অধিবাসী। তাঁর উত্তর পুরুষদের মধ্যে সন্দ্বীপের নাথ সম্প্রদায়ের লোক প্রাচীন কবিয়াল শ্রী প্রাণকৃষ্ণ কৈবর্তক ও শ্রীরাম দাস কৈবর্তক।
২। সপ্তম শতাব্দি থেকে তিন হাজার বছরের প্রাচীন দ্বীপ সন্দ্বীপের সহিত আরব বণিকগণের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক ছিল। তখন থেকেই আরব বণিকগণ সন্দ্বীপের উপনিবেশ স্থাপন ও স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে।
৩। নবম শতাব্দির শেষভাগে সুলতান বায়েজিদ বোস্তামি নামক বিখ্যাত সাধক স্বীয় ওস্তাদ আবু আলীর আদেশক্রমে সিন্ধু দেশ থেকে ইসলাম প্রচারের জন্যে সন্দ্বীপে আগমন করেন।
৪। ১০৪৭ খ্রীষ্টাব্দে মীর সৈয়দ সুলতান মাহমুদ মাহী সওয়ার বলকী নামক একজন মহাজ্ঞানী দরবেশ সন্দ্বীপে আসেন এবং ধর্ম প্রচার করেন।
৫। ১৩০০ শতাব্দিতে সুবিখ্যাত বারো আউলিয়া সন্দ্বীপে পদার্পণ করে যোহরের নামাজ আদায় করেন। এদের মধ্যে থেকে প্রসিদ্ধ সাধক বখতিয়ার মৈশূর সন্দ্বীপে বসতি স্থাপন করেন। রহিনিতে তাঁর মাজার ছিল। প্রাচীন জমিদার আবু তোরাব চৌধুরী তাঁরই বংশধর।
৬। ১৩৪৫ খ্রীষ্টাব্দে পর্যটক ইবনে বতুতা চীন যাওয়ার পথে এদেশে সফর করেন। তিনি চট্টগ্রাম, সন্দ্বীপ ও উপকূলীয় দ্বীপে বহু আরবকে বসবাস করতে দেখেন।
৭। ১৪১২ খ্রীষ্টাব্দে (৮৩৮ হিজরী) হযরত শাহ আলী বোগদাদী সন্দ্বীপ আগমন করে ইসলাম প্রচারের কাজ করেন।
৮। ১৫০০ শতাব্দীতে সন্দ্বীপের সমৃদ্ধি বঙ্গ বিজেতা মুসলমানের দৃষ্টি আকর্ষন করে। এ সময় রাজধানী থেকে অনেক মুসলিম ও সম্ভ্রান্ত পরিবার সন্দ্বীপ এসে স্থায়ীভাবে বসবাস আরম্ভ করে।
৯। ১৫৬৫ খ্রীষ্টাব্দে বিশ্ব ভ্রমণকারী নাগরিক সিজার ফ্রেডরিক সন্দ্বীপ থেকে একটি গরু ও একটি মুরগী ১ টাকা পৌনে ৯ আনা দিয়ে ক্রয় করেন। তিনি সন্দ্বীপবাসীকে 'মুর' (A reach of Arab) বলে উল্লেখ করেন।
১০। ১৫৮২ খ্রীষ্টাব্দে বঙ্গের সুবেদার রাজা টুডোর মল্ল 'সন্দ্বীপ পরগণা' সরকার ফাতেহাবাদের অন্তর্ভূক্ত করে সন্দ্বীপের রাজস্ব নির্ধারণ করেন।
১১। ১৬০২ খ্রীষ্টাব্দে নৌ যোদ্ধা বিশারদ কেদার রায় বিদেশী সেনাধ্যক্ষ কার্ভারোল এর সাহায্যে মোঘলের হাত থেকে সন্দ্বীপকে স্বাধীন করে নেয়।
১২। ১৬০৩ খ্রীষ্টাব্দে ফতেহ খাঁ সন্দ্বীপের শাসনভার গ্রহণ করে দিমাতুর শের এর অধীনে সন্দ্বীপ শাসন করতে থাকেন। ফতেহ খাঁ এর পতাকায় লেখঅ থাকতোঃ আল্লাহর রহমতে ফতেহ খাঁ সন্দ্বীপের সুলতান, খ্রীষ্টানদের রক্তপাতকারী এবং পূর্তগীজ জাতির ধ্বংসকারী।
১৩। ১৬০৯ খ্রীষ্টাব্দে গঞ্জালিসের সৈন্যবাহিনীর সাথে সন্দ্বীপের মুসলমান সৈন্যদের যুদ্ধ হয়।
১৪। ১৬১০ খ্রীষ্টাব্দের কিছু আগে থেকে গঞ্জালিস সন্দ্বীপের স্বাধীন নৃর প্রতি ছিলেন। তাঁর দেশরক্ষা বাহীনিতে ২০০০ সশস্ত্র বাঙ্গালী সৈন্য, কামান সজ্জিত ৮০ খানা জাহাজ, ২০০ অশ্বারোহী সৈন্য ও ১০০০ পূর্তগীজ সৈন্য ছিল।
১৫। ১৬১৫ খ্রীষ্টাব্দ পর্যন্ত গঞ্জালিস সন্দ্বীপের শাসনকর্তা ছিলেন। ১৬১৬ সালে তার পতনের পর চির দিনের জন্য সন্দ্বীপের পূর্তগীজ শাসনের অবসান হয়।
১৬। ১৬১৬ খ্রীষ্টাব্দে গঞ্জালিসকে পরাজিত করে আরাকান রাজ সন্দ্বীপের প্রশাসনিক কর্তৃত্ব হস্তগত করেন। একই বছর রাজা দেলোয়ার খান আরকান রাজাকে পরাজিত করে সন্দ্বীপের সাহিত্য শাসনকারী জনগণের সহযোগিতায় প্রায় অর্ধশতাব্দির জন্য স্বাধীন সন্দ্বীপের নৃর প্রতি হন। তাঁর রাজত্বকালে সন্দ্বীপের জনসাধারণ সুখে-শান্তিতে দিন কাটাতো।
১৭। ১৬১৮ থেকে ১৬২২ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে ইব্রাহীম খাঁর সুবেদারী আমলে নবাবের যুদ্ধস্তুত নেতা দেলোয়ার খাঁ অনেক শাহী প্রজাকে সন্দ্বীপে তাঁদের পরিবার নিয়ে বসবাসে বাধ্য করেন।
১৮। ১৬৬৫ সালে ৯ নভেম্বর, বৃহস্পতিবার, নবাবের সেনাপ্রধান আবুল হোসেন সন্দ্বীপ দূর্গ আক্রমণ ও দখল করেন। ১৯শে নভেম্বর সুলতান দিলালের পতনের সঙ্গে সঙ্গে এ ক্ষুদে রাষ্ট্রের স্বাধীনতার সূর্য চিরতরে অস্তমিত হয়।
লেখক আলী হায়দার চৌধুরী বাবলু, মহাসচিব, বায়রা।
সূত্রঃ সন্ধীপ নিউজ ২৪

Comments
Post a Comment