Header Ads

Header ADS

চিটাগং এন্ড সাম টকিংস - রাকিব আদনান চৌধুরী



চিটাইংগা, নিজেদের এই পরিচয়টাতেই যথেষ্ট গর্ববোধ করি আমরা। বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, পুরো বাংলাদেশের সব এলাকার মাঝে এই চট্টগ্রামের মানুষদেরই অাঞ্চলিকতা কোন কোন ক্ষেত্রে সামগ্রিক দেশাত্মবোধকেও ছাপিয়ে যায়। 

যাই হোক, চট্টগ্রামের মানুষদের বিয়ের বেলায় হ্যাপাও কম পোহাতে হয় না। কিছু কিছু রিতীনিতীতে আমি নিজেও বেশ বিরক্ত। তবে দেখা যাক চট্টগ্রামের একটা ছেলের বিয়ে থেকে শুরু করে বিয়ে পরবর্তী সময়ে কি কি ঘটনা ঘটে। 

  • পাত্রী দেখার শুরুতেই (হোক সেটা প্রেমঘটিত) দেখা হয় পাত্রী পক্ষ "ভইংগা" কিনা। চট্টগ্রামের মানুষ যতই উচ্চশিক্ষীত কিংবা হাই সোসাইটির হোক না কেনো তারা চট্টগ্রামের বাইরে আত্মীয়তা করতে চায় না। আর চট্টগ্রামের বাইরের মানুষদের (বিশেষ করে চট্টগ্রাম বিভাগের বাইরের) ঐ বিশেষ শব্দে ডাকা হয়। আসলে এর মূল কারন হলো বংশপরিচয় এবং বংশপরম্পরা। নিজেদের মাঝে আত্মীয়তায় এতো বেশী আষ্টেপিষ্টে গেছে যে এরা চট্টগ্রামের বাইরে গিয়ে পাত্রী কিংবা পাত্রপক্ষ সম্পর্কে সংবাদ কালেকশান করার ঝামেলা ইনারা পোহাতে চান না। 
  • এরপর আসে পাত্রীপক্ষ "রোয়াই" কিনা। মানে রোহীংগা মুসলিম কিনা। এটার ক্ষেত্রে অনেকে কিছুটা কম্প্রোমাইজ করে এখন। 
  • বিয়ের ডেট ঠিক হলো। এবার আসে সবচেয়ে বিরক্তিকর প্রথাটা। নাম দেয়া হয়েছে " দেয়া - নেয়া "। পাত্রপক্ষ পাত্রীপক্ষকে এবং Vice Versa এই কাহিনী ঘটে থাকে। পাত্রীপক্ষকেই শোষণ করা হয় মূলত। একটা লিস্ট দেই যে কি কি দিতে হয় -  বিয়ের সময় ফার্নিচার, শ্বশুরবাড়ির সবাইকে জামাকাপড় (শ্বশুরবাড়ির মানে লিস্টটা লতা পাতা পর্যন্ত) -গ্রীষ্মকালে ট্রাকভর্তি না হলেও নিদেনপক্ষে সিএনজি ভর্তি ফলমূল। - রোজার ঈদে আবার জামাকাপড়। - কোরবানির ঈদে গরু-ছাগল। - রোজার সময় ইফতারী। এরকম প্রতিটা ফাংশানে কিছুনা কিছু দেয়া চাই ই চাই। এগুলার কোনটাই আবার খুঁজতে হয় না। সানন্দে শুরু করা কিছু মানুষের বিলাসীতা এখন চট্টগ্রামের সবার জন্য ফরজ হয়ে গেছে। তেতো সত্য হলো বাইরের লোকেরা এগুলা দিতে পারে না বলেই তাদের সাথে নো অাত্মীয়তা।  সো বাইরের জেলার যাদের বিভিন্ন এপস এ ম্যারেজ প্লেস চট্টগ্রাম আসছে প্রিপারেশান নেয়া শুরু করে দেন!  কিন্তু বছরের পর বছর এসব রিতীনিতী মেনেই আশ্চর্যজনক ভাবেই চট্টলা ঠিকে আছে। আজো কুঁড়েঘর থেকে প্রাসাদের বাসিন্দা সব চিটাইংগাই এসব রিতী মানে কিংবা মানতে বাধ্য।

 এবার আসি এতো কিছুর পরও কেনো টিকে আছে চট্টলার পরিবারগুলো 
  • বিশ্বাস করুন আর নাই করুন বাংলাদেশের সবচেয়ে সুখী মানুষগুলোর দেখা এখানেই পাবেন। পাবেন সবচেয়ে উদার মানুষগুলার দেখা। এখানে এখনো টিকে আছে সমাজ ব্যবস্থা। সমাজের সবগুলো মানুষ মিলেই মেয়েদের বিয়ে দেয়, বিশেষ করে গ্রামে । তাই ভারটাও অতবেশী পড়ে না অক্ষমদের ক্ষেত্রে। 
  • সবচেয়ে ভোজনরসিক মানুষগুলো পাবেন এখানে। খেতে আর খাওয়াতে ভালোবাসে এখানকার মানুষেরা। যে চট্টগ্রামে এসে মেজবান খেয়ে যায় নাই, তার লাইফ বৃথা।
  •  সংগ্রামের সাথে নিত্য পরিচয় এখানকার মানুষদের। "সিনা দি টেকাই আঁরা জর তুয়ান "! সব কিছুর মাঝেও একগাল হেসে জিজ্ঞেস করবে - " বদ্দা, কেন আছন? " 
  •  আর এতো দেয়া নেয়া প্রথার কারনেই বোধহয় আত্মীয়তার বন্ধনটা এতো প্রবল। এই প্রথার কারনে বছরে দু তিনবার করে হলেও সব নিকটাত্মীয়র কাছে ঘুরা হয়, খোঁজখবর নেয়া হয়। যেটাতে মোটামুটি পুরো বাংলাদেশ পিছিয়ে। আর একারনেই সবচেয়ে বেশী একান্নবর্তী পরিবার টিকে আছে এই চট্টলার বুকে (আমাদের টাও)।
  • খুব আবেগী এখানকার মানুষগুলা। আত্মীয়ের সম্পর্ক থাকা লাগে না, লাগে না নাঁড়ীর সম্পর্ক, শুধু একবার বিপদে পড়ে দেখেন, হয়তো অনেক ক্ষেত্রে আপনার আত্মীয়দের আগে এগিয়ে আসবে এই মানুষগুলাই। কেও যদি না আসে তাহলে ধরে নেন সে সংকারীয়ত চিটাইংগা। নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করবে আপনাকে সাহায্য করবার এই "চিটাইংগা" রা। 
  •  যাই হোক, এট লাস্ট হেভ টু সে, প্রাউড টু বি এ চিটাইংগা!  অনেক পুরাতন একটা লেখা। ২০১৩ এর দিকে লিখেছিলাম। আফসোস চিটাইংগা শব্দটা কেঁড়ে নেয়া হলো। 
মহিউদ্দিন চৌধুরী বেঁচে থাকলে বলতো - " কিরমিয়ে গুঁতারদে না ওডো? চিটাং এর নাম চিটাং ই থাইবু! "

No comments

Powered by Blogger.